আজঃ সোমবার ২০ মে ২০24
শিরোনাম

গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ ডা. মিলন

প্রকাশিত:রবিবার ২৭ নভেম্বর ২০২২ | হালনাগাদ:রবিবার ২৭ নভেম্বর ২০২২ | অনলাইন সংস্করণ
দর্পণ নিউজ ডেস্ক

Image

অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ:

১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময় তৎকালীন সরকারের লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীদের গুলিতে ডা. শামসুল আলম খান মিলন নিহত হন। এই শোকাবহ ঘটনার স্মরণে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিবছর শহীদ ডা. মিলন দিবস পালিত হয়ে আসছে। ডা. মিলনের মধ্য দিয়ে তখনকার স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চারিত হয়। অল্প কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এরশাদ সরকারের পতন ঘটে।

হাজারো সংগ্রাম, অসংখ্য আত্মত্যাগ ও মানবতার সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের একমাত্র জাতীয় ঐতিহাসিক সংগঠন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ)। চিকিৎসক ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মুমূর্ষু মানুষের সেবায় সদাব্যস্ত এ সংগঠনের সদস্যরা।

এ দেশের মানুষের কাছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের পথিকৃত বিএমএ। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ঢাকা মেডিক্যালের পার্শ্বে সুউচ্চ শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা, ৬৯-এর গণ আন্দোলন এবং ৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এ সংগঠনের সংগ্রামী সেনারা নির্ভীক আত্মত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত। পেশাজীবীদের মধ্যে সর্বোচ্চ রক্তদানকারী চিকিৎসকরা অন্যদের সাথে নিয়ে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছে। সেই গৌরবময় ইতিহাস ও পূর্বসূরীদের অনুপ্রেরণায় ডা. শামসুল আলম খান মিলনসহ আমরা সেই বিএমএ-র সদস্য হতে পেরে সত্যিই গর্বিত।

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময় অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স তখন মাত্র ২০ বছর। যে লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭১ সালে তৎকালীন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এদেশের ছাত্র-যুবক, শিক্ষক, চিকিৎসক, কৃষক, শ্রমিক, জনতাসহ সকল পেশার মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন; স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় দেশি-বিদেশি চক্রান্তের সেই জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে লক্ষ্যচ্যুত হয় বাংলাদেশ।

আবারো এদেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় অগণতান্ত্রিক সামরিক স্বৈরশাসন। সেই স্বৈরশাসকের নাগপাশ ছিন্ন করে গণতন্ত্র উত্তরণের বছর হিসেবে আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছিল ১৯৯০ সাল।

১৯৯০ সাল ঢাকার রাজপথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমে এসেছিল সকল মতের, পেশার মানুষ। লক্ষ্য একটাই ছিলো স্বৈরশাসকের পতন, গণতন্ত্রের উত্তরণ। তাই ঢাকা শহর সে সময় পরিণত হয়েছিল মিছিলের নগরীতে।

বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ও চিকিৎসা পেশার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ২৩ দফার ভিত্তিতে যখন অগণতান্ত্রিক সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই সামরিক স্বৈরাচারের দোসর ডা. জাফর উল্লাহ গংদের সহায়তায় ১৯৯০ সালে এদেশের জনগণের ওপর টিক্কা খান সরকারের মত চাপিয়ে দেওয়া হয় গণবিরোধী স্বাস্থ্যনীতি।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে চিকিৎসক সমাজ অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া গণবিরোধী স্বাস্থ্যনীতির বিরুদ্ধে অন্য সকল পেশাজীবিদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনকে আরো বেগবান করে।

অতঃপর এলো ২৭ নভেম্বর ১৯৯০। সারাদেশে স্বৈরাচার সামরিক সরকারবিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। বিএমএ-র নেতৃত্বে ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারাদেশে চলছিল চিকিৎসকদের কর্মবিরতি। তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চলছিল বিএমএ আহুত চিকিৎসক সমাবেশ। এতে যোগদানের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে রিকশাযোগে শাহবাগ পিজি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন তৎকালীন বিএমএ-র মহাসচিব ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও যুগ্ম-সম্পাদক ডা. শামসুল আলম খান মিলন।

পথিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সংলগ্ন টিএসসি মোড় অতিক্রমের সময় তাদের রিকশা লক্ষ্য করে গুলি চালায় সামরিক জান্তাবাহিনী। বুকে গুলি লেগে রিকশা থেকে লুটিয়ে পড়েন ডা. মিলন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে রিক্সায় করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে। সেখানে জরুরি চিকিৎসা করেও বাঁচানো যায়নি তাকে। সকলকে কাঁদিয়ে তার প্রিয় মেডিক্যাল কলেজেই শহীদের বেশে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। অথচ এই কলেজেই তিনি পড়েছিলেন মেধাবী ছাত্র হিসেবে, পড়িয়েছিলেন বিনয়ী শিক্ষক হিসেবে, নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রাঞ্জল সদালাপী পরমসহিষ্ণু ব্যক্তি হিসেবে।

ডা. মিলন শহীদ হওয়ার পর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরো বেগবান হয় এবং অবশেষে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে প্রাথমিক বিজয় সূচিত হয়। স্বার্থক হয় মিলনের আত্মদান।

শহীদ ডা. মিলন এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্বের নাম। ১৯৫৭ সালের ২৯ জানুয়ারি বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ১ম বর্ষে ভর্তি হয়ে ১৯৮৩ সালে এমবিবিএস পাস করে চিকিৎসক হিসেবে কর্মময় জীবন শুরু করেছিলেন তিনি। ঢাকা মেডিকেলে ইন্টার্নশিপ চলাকালীন তিনি ইন্টার্ন চিকিৎসক সংগঠনের আহ্বায়ক হয়েছিলেন। শিক্ষক হিসেবেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

ডা. শামসুল আলম খান মিলনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতভাবে কাজ করার সুযোগ হয়েছিলো ১৯৮৮ সাল থেকে। তখন বিএমএ নির্বাচনে মিলন যুগ্ম-স¤পাদক ও আমি দপ্তর সম্পাদক পদে নির্বাচিত হই। সেই থেকে একইসঙ্গে সংগঠনের হয়ে কাজ করতাম। দুটি ভিন্ন প্যানেল থেকে আমরা নির্বাচিত হলেও বিএমএ-র কাজে বা পেশাগত কোনো বিষয়ে আমাদের মধ্যে বড় ধরনের কোনো মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়নি। একে অপরের সহযোগী বা পরিপূরক হিসেবে পেশার জন্য অটল থেকে কাজ করেছি। চিকিৎসকদের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণ চিকিৎসকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন তিনি, যা তার নির্বাচিত হয়ে আসা থেকেই প্রতীয়মান হয়।

১৯৯০ সালের ২৭ জুলাই বিএমএ-র বিশেষ বার্ষিক সাধারণ সভায় গণবিরোধী স্বাস্থ্যনীতি ও স্বৈরশাসকের অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদে সকল চিকিৎসক সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন মঞ্চ থেকে নেমে আমি আর মিলন এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। ওই সময় বিবিসি রেডিও থেকে টেলিফোনে বিএমএ নেতাদের একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ১৯৯০ সালের ২৭ জুলাই রাতে বিবিসি রেডিওতে আমার যে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়, তাতে মিলন পাশে থেকে বিভিন্ন বিষয় কথা বলতে আমাকে সহযোগিতা করেছিলেন।

শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের ২৭ তম শাহাদাত বার্ষিকীতে আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। ডা. মিলনের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না। এ আত্মদান ছিল দেশের সাধারণ ও বৃহত্তর মানুষের মঙ্গলের জন্য। তিনি ছিলেন অতিমাত্রায় একজন সমাজ সচেতন মানুষ। এদেশের হাজার হাজার চিকিৎসকদের প্রতি, চিকিৎসা পেশার প্রতি, সাধারণ মানুষের প্রতি, গণতন্ত্রের প্রতি তার অপরিসীম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ ছিল।

মাঝে মধ্যে হোঁচট খেলেও বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বয়সও আজ সাতাশ বছর। ডা. মিলন যে ধারণ করে, যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে সংগ্রাম করতে করতে আত্মহুতি দিয়েছিলেন, অনেক হতাশার পর ১৯৯৬-২০০১ ও ২০০৮ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তিন মেয়াদে দায়িত্বরত জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত গণতান্ত্রিক সরকার তার অনেকটাই বাস্তবায়ন করেছে।

ইতিমধ্যে গণমুখী জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি-২০১২ প্রণয়ন, ১৩৬২ আইএসটি শিক্ষক-চিকিৎসকদের চাকরি নিয়মিত করা, ডিপিসির মাধ্যমে হাজার হাজার চিকিৎসক-শিক্ষক-কর্মকর্তার পদোন্নতি, নতুন নতুন পদ ও বিভাগ সৃষ্টি, বেকার চিকিৎসকদের কর্মসংস্থান, চিকিৎসকদের মর্যাদা বৃদ্ধি, উচ্চতর ও উন্নত চিকিৎসা শিক্ষার প্রসারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট এবং খুলনায় আরো চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নতুন নতুন সরকারি মেডিকেল কলেজ, বিশেষায়িত মেডিকেল ইনস্টিটিউট-নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা, শিশু-মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ডিজিটাল পদ্ধতি প্রবর্তন, গড় আয়ু বৃদ্ধি ও কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠার মধ্যে অন্যতম।

বিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ও মৃত্যুরোধে এখনো পর্যন্ত সফলতার পরিচয় দিয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে বিনামূল্যে প্রায় ৮০ শতাংশ  মানুষের টিকাদান সম্পূর্ণ হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যা কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় দেশে করোনা ভ্যাক্সিন উৎপাদনের কাজ শুরু হয়েছে, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হবে। ২০১০ সালে প্রকাশিত গুড হেলথ অ্যাট লো কস্ট : টোয়েন্টি ফাইভ ইয়ারস অন শীর্ষক বইয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে অগ্রগতির যে কারণগুলো উল্লেখ করা হয়, তার মধ্যে ছিল বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচি।

বলা যায়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল। স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়নের জন্য সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতিসংঘের এমডিজি এ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ডসহ একাধিক পুরস্কার অর্জন করেছে। সম্প্রতি সরকার সকল জনগণের জন্য স্বাস্থ্যবীমা ও মেডিকেল হেলথ কার্ড প্রবর্তনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সার্বিক উন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে নতুন জাতীয় ঔষধ নীতিও প্রণয়ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে সেবার মান আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে অচিরেই জাতীয় অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড কাজ করবে।

এই দিবসে প্রত্যাশা-বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার অচিরেই বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে নিয়োজিত চিকিৎসক কর্মকর্তার সঙ্গে অন্যান্য পেশার বা ক্যাডারের মধ্যে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করবে। কর্মস্থলে চিকিৎসকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান প্রয়োজন ও চিকিৎসা অবকাঠামো নির্মাণসহ স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বৃদ্ধি প্রয়োজন, এছাড়াও চিকিৎসকদের জন্য  স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রবর্তন, স্বাস্থ্য বীমা, Health Commission গঠন সময়ের দাবি। গ্রামীণ জনপদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিকট উন্নত চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য ও সম্প্রসারিত হবে। মিলনের বিদেহী আত্মার শান্তিতে থাকুক এই কামনা নিরন্ত।


আরও খবর



মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্ত চায় মানবাধিকার কমিশন

প্রকাশিত:রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সম্প্রতি একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে মিল্টনের বিরুদ্ধে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়।

রোববার (২৮ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কমিশন চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিরীহ মানুষকে তুলে এনে চিকিৎসার নামে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির যে অভিযোগ মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে উঠেছে তা অত্যন্ত ভীতিকর, ন্যক্কারজনক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে না নিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে আটকে রাখা, ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে মৃত্যুর সনদ তৈরি করা কিংবা মরদেহে কাটাছেঁড়ার যে তথ্য প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত মর্মে কমিশন মনে করে।

কমিশন চেয়ারম্যান আরও বলেন, এ অবস্থায় অভিযোগের বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক দ্রুত কমিশনে প্রতিবেদন পাঠাতে পুলিশ কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠাতে মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে।

আগামী ৩০ মের মধ্যে সংস্থাগুলোকে প্রতিবেদন দিতে বলেছে কমিশন।


আরও খবর



সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পেছাল ১০৮ বার

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আদালত প্রতিবেদক

Image

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ১০৮ বার পেছাল। আগামী ৩০ জুন প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন মামলার তদন্ত সংস্থা র‌্যাব প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এজন্য ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল হকের আদালত প্রতিবেদন দাখিলের নতুন এ তারিখ ঠিক করেন।

আদালতের শেরে বাংলা থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা আলমগীর বিষয়টি জানিয়েছেন।

আলোচিত এ হত্যা মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আসামি আটজন। অন্য আসামিরা হলেন বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ।

আসামিদের প্রত্যেককে একাধিকবার রিমান্ডে নেওয়া হলেও তাদের কেউই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি নিজেদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।

এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক এসআই। চার দিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।

দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে একই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র‍্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেই থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি।


আরও খবর



ফারাক্কা বাঁধ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত:বুধবার ১৫ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ১৫ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

ফারাক্কা বাঁধ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আগামীকাল ১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস’ উপলক্ষে আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো বাণীতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ১৬ মে ফারাক্কা দিবস’ আমাদের জাতীয় আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ থেকে ৪৮ বছর আগে অবিসংবাদিত মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ডাকে সারাদেশ থেকে লাখো জনতা ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত গঙ্গা নদীর পানি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ন্যায্য হিস্যা আদায়ের সংগ্রামে ফারাক্কা অভিমুখে ঐতিহাসিক মিছিল লংমার্চে অংশ নেয়। ভারতে গঙ্গা নদীর ফারাক্কা পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণ করে অভিন্ন নদীর পানি একতরফা প্রত্যাহার শুরু করা হয়। যার ফলে বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল আজ প্রায় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ওই এলাকায় পানিসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। জীববৈচিত্র ও পরিবেশগত মানকে বিবেচনা না করে এবং প্রাকৃতিক ও মানবিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের মতামতকে অগ্রাহ্য করে ভারতকে কয়েক দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালুর অনুমতি দেয়। কিন্তু সেই বাঁধ অব্যাহতভাবে আজ পর্যন্ত চালু আছে। এই বাঁধ এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, তৎকালীন আওয়ামী সরকারের কারণে এ দেশের জনগণ পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত। এই বঞ্চনা ও দেশের প্রকৃতির বিপর্যয়ে জনদুর্দশারআশংকায় প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী জনগণকে সাথে নিয়ে ফারাক্কা অভিমুখে ঐতিহাসিক মিছিল করে ভারত সরকারের নিকট প্রতিবাদ করেন এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিকট বিষয়টি তুলে ধরেন। তখন থেকে ব্যাপক মানববিপর্যয় সৃষ্টিকারী ফারাক্কা বাঁধের বিষয়টি আন্তর্জাতিক পরিসরে আলোচিত হতে থাকে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি মনে করি আজও ফারাক্কা দিবসের তাৎপর্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আন্তর্জাতিক আইন—কানুন ও কনভেনশনের তোয়াক্কা না করে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদীতে একের পর এক বাঁধ নির্মাণে নদীর ধারাকে বাধাগ্রস্ত করে একতরফা নিজেদের অনুকুলে পানি প্রত্যাহার বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ নিষ্ফলা উষর ভূমি হয়ে উঠার আলামত ইতোমধ্যেই ফুটে উঠেছে।’


আরও খবর



দেশের ছয় অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির আভাস, নদীবন্দরে সতর্ক সংকেত

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

দেশের ছয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া এক পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, যশোর, কুষ্টিয়া এবং খুলনা অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সঙ্গে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।


আরও খবর
বৃষ্টির পর আসছে হিট ওয়েভ

শনিবার ১৮ মে ২০২৪




পাকিস্তানে ট্রাক খাদে পড়ে এক পরিবারের ১৪ জন নিহত

প্রকাশিত:রবিবার ১৯ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

পাকিস্তানের খুশাবের কাছে ট্রাক খাদে পড়ে নয় শিশুসহ এক পরিবারের অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছে। শনিবার (১৮ মে) মর্মান্তিক এ ঘটনায় আরও নয়জন আহত হয়েছে বলে দেশটির কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। ট্রাকে যারা ছিলেন তারা সবাই মূলত শ্রমিক। কাজের উদ্দেশে তারা খুশাবে যাচ্ছিলেন।

২৩ জন যাত্রী নিয়ে ট্রাকটি খাইবার পাখতুনখোয়ার বান্নু জেলা থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। আর খুশাবের দিকে যাচ্ছিল। খুশাব শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে সুন ভ্যালির শহরতলী দরবার পাঞ্জ পীর মানাওয়ান সড়কের কাছে এসে ট্রাকটি উল্টে যায়।

ডিসট্রিক্ট রেসকিউ অফিসার হাফিজ আব্দুল রাশেদ ধারণা করছেন, ব্রেক ফেইল হয়ে যাওয়ায় ট্রাকটি চালকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। ফলে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

রাশেদ বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুশাবের রেসকিউ কন্ট্রোল রুম একটি জরুরি ফোন পায়। তারপর উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে।

একই পরিবারের ১৪ জন ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। আহতদের খুশাবের নওশেহরা তেহসিলের টিএইচকিউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর সাতজনকে ডিএইচকিউ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

পাঞ্জাবের প্রধানমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ শরীফ এ দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগীদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ও আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেছেন।

চলতি বছরের ১০ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন বেলুচিস্তানের হাব জেলায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছিল।


আরও খবর