কুড়িগ্রামে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যদিও তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ নিয়ে আজকের দর্পণ এ
ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে বুধবার (২ ডিসেম্বর) তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তও করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনাস্থলে গিয়ে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছা. জিলুফা সুলতানা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জমির মালিকানা নির্ধারণে নামজারি ও খারিজ করতে পাঁচ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করতেন। জমির পরিমাণ কিংবা ব্যক্তির অবস্থা দেখে ঘুষের টাকার পরিমাণ কমবেশি করতেন তিনি। শুধু তাই নয় জমি-জমা সংক্রান্ত যে কোনো সাধারণ কাজ করতেও তার অফিসে ঘুষ দেয়া নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। চাহিদামতো ঘুষ দিতে না পারলে মাসের পর মাস ঘুরেও জমি সংক্রান্ত কোনও কাজের সুরাহা পাওয়া যেত না। ফলে ওই উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তার এমন কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন ইউনিয়নবাসী।
ভুক্তভোগী আশিকুর রহমান জানান, চার মাস আগে ১৯ শতক জমির খারিজের জন্য সরকারি ফি বাদে অতিরিক্ত আট হাজার টাকা দাবি করেন ওই ভূমি কর্মকর্তা। সে অনুযায়ী দুই দফায় তাকে ৮ হাজার টাকা দেয়া হয়। এ অবস্থায় তিন মাস পার হলেও তিনি খারিজ না করে আরও বিশ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে ঝগড়াবিবাদ বাধলে একমাস আগে সবার সামনে পাঁচ হাজার টাকা ফেরত দেন তিনি।
অপর ভুক্তভোগী ফাতেমা বেগমের অভিযোগ, জমির নাম খারিজের জন্য পাঁচ হাজার টাকা নিলেও মাসের পর মাস মাস ধরে ঘোরাচ্ছেন ওই কর্মকর্তা।
বিধবা নারী রোদেলা বেগম জানান, তার জমির নাম খারিজের জন্য ছয় হাজার টাকা দাবি করেন উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা। তিন হাজার টাকা দেওয়ার পর আর টাকা দিতে না পারায় তার জমি খারিজ হয়নি।
আরেক ভুক্তভোগী আব্দুল কালাম জানান, জমির খাজনা দিতে গেলে ওই কর্মকর্তা ৮২ হাজার টাকা দাবি করে। কয়েক দিন ঘোরাঘুরির পর প্রভাবশালী লোক ধরে তা ১৫ হাজার টাকায় সুরাহা করা হয়েছে।
আন্ধারীরঝাড় ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের জানান, ওই ভূমি কর্মকর্তার ঘুষ বাণিজ্য চরমে উঠেছে। এর প্রতিকার হওয়া দরকার।
আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ খোকন জানান, উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ‘জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পে’ টাকার বিনিময়ে তালিকা করায় অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তবে উপ সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করছেন।