বায়ু দূষণের কারণে বছরে প্রাক্কলিত ক্ষতি
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৯ শতাংশ এবং ৩২ শতাংশ মৃত্যু পরিবেশ দূষণের সঙ্গে সম্পর্কিত।
বিশেষ করে বাড়ি এবং বাড়ির বাইরের বায়ু দূষণ, নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিনে ঘাটতি
এবং সিসা দূষণ এ জন্য দায়ী। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ক্লাইমেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের
এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে এ প্রতিবেদন
উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাসটেইনেবিলিটি ডেভেলপমেন্ট রিজিওনাল ডিরেক্টর
জন রুমি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ গুরুতর জলবায়ু
ঝুঁকিতে রয়েছে, জোরালো কার্যক্রম হাতে না নিলে দরিদ্র এবং দুর্বল ও ঝুঁকিতে থাকা মানুষের
ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে, যা উন্নয়নের গতি দুর্বল করবে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের
নানা গুরুতর ঝুঁকির মুখোমুখি। শুধু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বছরে গড় ক্ষতির
পরিমাণ ইতোমধ্যে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার (মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ)।
এসব প্রভাব আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হলে এর চেয়ে বেশি ক্ষতি হতে পারে।
গুরুতর বন্যার মুখে বাংলাদেশের জিডিপি ভিত্তিরেখার তুলনায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।
বাংলাদেশের উপকূলে মূলত জলবায়ুর ঝুঁকি প্রকট।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,
তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বৃষ্টিপাত ৪ শতাংশ বাড়লে ২০৫০ সাল নাগাদ বঙ্গোপসাগরে
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২৭ সেন্টিমিটার অথবা তারও বেশি বাড়তে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা
এভাবে বাড়লে সম্পদহানির ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ হবে, বর্তমানে যা বছরে আনুমানিক ৩০০ মিলিয়ন
ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন হাজার ৩৯ কোটি ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এ ছাড়া কৃষি উৎপাদন,
পানি সরবরাহ এবং উপকূলীয় ইকোসিস্টেমের বৈচিত্র্য হুমকির মধ্যে পড়বে।
কোনো কার্যক্রম হাতে না নিলে ২০৪০ সাল
নাগাদ কৃষি জমি জাতীয়ভাবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি এবং দক্ষিণাঞ্চলে ১৮ শতাংশ কমতে পারে।
জলবায়ুর পরিবর্তনশীলতা এবং গুরুতর দুর্যোগের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ মোট কৃষি জিডিপির
এক-তৃতীয়াংশ হারিয়ে যেতে পারে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে ১৩ মিলিয়নের বেশি মানুষের জলবায়ুজনিত
স্থানীয় অভিবাসন ঘটতে পারে বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে জানানো হয়।
চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান
ব্যুরো (বিবিএস) একটি জরিপের তথ্য প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, গত ছয় বছরে বিভিন্ন
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ ৭৯ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা।
এই হিসাব শুধু দুর্যোগপ্রবণ এলাকার। সারা দেশের হিসাব করা হলে সেটি আরও অনেক বেশি
হবে। জরিপের তথ্যমতে, প্রাকৃতি দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষিখাতে ৫২ দশমিক
৫৬ শতাংশ এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষতি শস্যখাতে ২৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।
চলতি বছরের অক্টোবরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক
(এডিবি) জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের একটি পরিসংখ্যান
প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে
বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখেরও বেশি মানুষ। আশঙ্কা
করা হয়, সামনের বছরগুলোতে এ হার দ্রুত আরও বাড়বে, যা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে
পারে।