যে কায়দায় এমপি
আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা করা হয়– তা গা শিউরে ওঠার মতো কাহিনি। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী,
কিলার ভাড়া করা হয়েছিল। কিলিং মিশনে ‘কসাইয়ের’ ভূমিকা রাখে বাংলাদেশি দুই যুবক। তারা হলো– খুলনার
দিঘলিয়ার বারাকপুরের বাসিন্দা জিহাদ হাওলাদার ও ভোলার সিয়াম। জিহাদ এখন ভারতীয় পুলিশের
হেফাজতে আর সিয়াম নেপালে পালিয়েছে।
গোয়েন্দারা হত্যা
মিশনে জিহাদ ও সায়েমের নানা নৃশংসতার কথা জানতে পেরেছেন। জিহাদ অনেক আগে থেকে পেশায়
কসাই। হত্যা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার আগে ভারতে দীর্ঘদিন অবস্থান করা জিহাদকে ভাড়া করা
হয়।
জানা গেছে, জিহাদ
কয়েক বছর আগে অবৈধভাবে ভারতে যায়। কখনও দিল্লি আবার কখনও মুম্বাইয়ে বসবাস করত। সেখানে
‘দক্ষ কসাই’ হিসেবে তার পরিচিতি আছে। হত্যার
পরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার পর দুই মাস আগে তাকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় আনা হয়।
হত্যাকাণ্ডের
মূল পরিকল্পনাকারী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি আখতারুজ্জামান শাহীনই তাকে নিয়ে
আসেন। আজীম হত্যার ঘটনায় জড়িত ভাড়াটে সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়ার সহযোগী জিহাদ। হত্যায়
তার সংশ্লিষ্টতার তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর গতকাল
শুক্রবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাত আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে
নেওয়া হয়।
জিহাদ প্রথমে
নিজেকে সিয়াম বলে পরিচয় দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। অবশ্য পরে তার প্রকৃত পরিচয়
নিশ্চিত হওয়া যায়।
জিহাদ জিজ্ঞাসাবাদে
দাবি করেছে, ১৪ মে কলকাতার নিউ টাউন এলাকায় ওই ফ্ল্যাটে ঢোকার পরপরই বাইরে থেকে আসা
ক্লান্তির ধকল সারতে বেসিনে হাতমুখ পরিষ্কার করেন আজীম। এ সময় ক্লোরোফর্ম দিয়ে তাকে
অচেতন করা হয়। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আজীমকে বালিশচাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে
সে।
আজীম মারা যাওয়ার
পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে লাশ টুকরো টুকরো করে সে। চামড়া থেকে মাংস আলাদা করে জিহাদ। এরপর
লাগানো হয় হলুদ। হলুদ মেশানো টুকরো টুকরো অংশ ফ্রিজেও রাখা হয়। সবশেষে লাশের টুকরো
ব্যাগে ভরা হয়। এরপর ব্যাগভর্তি লাশের টুকরো দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় একটি খালে ফেলা
হয়েছে।
জানা গেছে, আজীমকে
হত্যার জন্য জিহাদকে নিউ টাউন এলাকায় চিনার পার্কের একটি ফ্ল্যাটে রাখা হয়। এরপর তাকে
মূল ঘটনাস্থল সঞ্জিভা গার্ডেনে আনা হয়। আজীম ঢোকার আগে থেকেই সে সেখানে অবস্থান করছিল।
এদিকে পলাতক সিয়ামের
ব্যাপারে এখনও খুব বেশি তথ্য জানা যায়নি। সেও অবৈধভাবে ভারতে যাতায়াত এবং অবস্থান করছে।
এমনকি তার কাছে ভারতের আধার কার্ডও (নাগরিক পরিচয়পত্র) রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা
শাহীনের বাসায় পরিকল্পনা বৈঠকে সেও ছিল বলে একটি সূত্রে তথ্য মিলেছে। হত্যার ঘটনায়
সে সরাসরি অংশ নেয়। লাশের টুকরো ব্যাগে ভরে বিভিন্ন স্থানে ফেলার ক্ষেত্রেও সে ছিল
বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।