আজঃ শুক্রবার ৩১ মে ২০২৪
শিরোনাম

আওয়ামী লীগের অনিবার্যতা: শ ম রেজাউল করিম

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ২৪ জুন ২০২১ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৪ জুন ২০২১ | অনলাইন সংস্করণ
Image
বাংলাদেশের বয়স এখন ৫০। এই ৫০ বছরে অনেক উত্থান-পতন ও নিদারুণ দুঃসময় পেছনে ফেলে এ পর্যন্ত সাড়ে ২৩ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে সরকার পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে আওয়ামী লীগ

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন বিকালে ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে গঠিত হয় একটি নতুন রাজনৈতিক দল। যার নাম দেওয়া হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরে সে দলটিরই নাম হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৭২ বছরের পথচলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে বাঙালি জাতির আশা-আকাক্সক্ষার মূর্ত প্রতীক, জাতীয়তা বিকাশের সূতিকাগার, স্বাধিকার আদায়ের স্বপ্নসারথি আর মুক্তির সংগ্রামের ধারক ও বাহক। শুধু মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনই নয়, বাঙালি জাতির প্রায় সব অর্জনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আর এ দলটি সংগঠিত করা থেকে শুরু করে গৌরবময় উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত ক্রমবিবর্তনের ধারায় যিনি ছিলেন প্রাণভোমরা, তিনি বাঙালি জাতির প্রবাদপুরুষ, ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু প্রাসঙ্গিকই নয় বরং অপরিহার্য। বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের সৃষ্টি ও ধারাবাহিক সমৃদ্ধি একই সূত্রে গ্রথিত। বর্ণাঢ্য ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ৭২ বছরের এ রাজনৈতিক দলটির হাত ধরে আজ বাংলাদেশ এমন এক পর্যায়ে উপনীত যে বলতেই হয়, শাবাশ বাংলাদেশ! এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যে ইতিহাস সামনে আসে তা হলো, ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টির পর ঢাকায় মুসলিম লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন মাওলানা আকরম খাঁ ও খাজা নাজিমুদ্দিন। সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিম নেতৃত্বাধীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অনুসারী যে উদারপন্থি নেতারা ছিলেন তাঁরা নিজেদের অবহেলিত মনে করছিলেন। কলকাতা থেকে এসে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হন। তখন টাঙ্গাইলে শূন্য হওয়া একটি আসনের উপনির্বাচনে দুই দফায় মুসলিম লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন মওলানা ভাসানী ও শামসুল হক। কিন্তু তাঁদের দুজনের নির্বাচনী ফলই অবৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন! তখন তাঁরাও এসে এই মুসলিম কর্মীদের সঙ্গে মিলে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথা ভাবতে শুরু করেন। রোজ গার্ডেনে অনুষ্ঠিত সভায়ই ২৩ জুন বিকালে আড়াই শ-তিন শ লোকের উপস্থিতিতে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর প্রস্তাব অনুযায়ী সে দলের নামকরণ হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্মসম্পাদক হন সে সময়ের কারাবন্দী তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সৃষ্টির প্রেক্ষাপট লিখেছেন এভাবে- কর্মী সম্মেলনের জন্য খুব তোড়জোড় চলছিল। আমরা জেলে বসে সেই খবর পাই। ১৫০ নম্বর মোগলটুলীতে অফিস হয়েছে। ...আমরা সম্মেলনের ফলাফল সম্বন্ধে খুবই চিন্তায় দিন কাটাচ্ছিলাম। আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল, আমার মত নেওয়ার জন্য। আমি খবর দিয়েছিলাম, আর মুসলিম লীগের পিছনে ঘুরে লাভ নাই। এই প্রতিষ্ঠান এখন গণবিচ্ছিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ...এরা কোটারি করে ফেলেছে। একে আর জনগণের প্রতিষ্ঠান বলা চলে না। ...আমাকে আরও জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আমি ছাত্রপ্রতিষ্ঠান করব, না রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করা হলে তাতে যোগদান করব? আমি উত্তর পাঠিয়েছিলাম, ছাত্র রাজনীতি আমি আর করব না, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানই করব। কারণ বিরোধী দল সৃষ্টি করতে না পারলে এ দেশে একনায়কত্ব চলবে।

বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী থেকে এটি স্পষ্ট, রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার পেছনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল। একই সঙ্গে তৎকালীন শাসক গোষ্ঠীর শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাঙালির ঐক্যবদ্ধ জাগরণের একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম হিসেবে তিনি দূরদৃষ্টি দিয়ে আওয়ামী লীগ সৃষ্টিকে ভেবে রেখেছিলেন। নবসৃষ্ট আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পেয়ে একই বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি ছাত্রলীগের নতুন ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে দেন এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রসারে মনোনিবেশ করেন। দেশজুড়ে কর্মী সংগ্রহ ও দলীয় প্রচারণার কাজ করতে হয় বঙ্গবন্ধুকে। নিজের দূরদর্শিতা, চিন্তা-চেতনা আর অসাধারণ নেতৃত্বগুণে মাত্র ৩০ বছর বয়সেই আওয়ামী লীগের অপরিহার্য মুখ হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর কথায় মুগ্ধ হয়ে ১৯৫০ সালের ১৮ ও ১৯ মার্চ নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন অখন্ড বাংলার শেষ মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। পাকিস্তানজুড়ে একটি রাজনৈতিক আবহ সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে প্রাদেশিক দল থেকে পুরো পাকিস্তানের জাতীয় দলে পরিণত হয় আওয়ামী লীগ।

১৯৫৩ সালে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং একজন বাঙালি নেতা হিসেবে তাঁর আবির্ভাব হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সাংগঠনিক তৎপরতায় ছিল তাঁর দূরদর্শী রাজনৈতিক সচেতনতা। ফলে তিনি আওয়ামী লীগকে মাটি ও মানুষের কাছাকাছি নিয়ে যেতে সক্ষম হন। বাংলার মানুষের ন্যায়সংগত দাবি-দাওয়া ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তিনি পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আপসহীন আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৫৫ সালে সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সব ধর্মের মানুষের অন্তর্ভুক্তি এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি প্রত্যাহার করে নাম রাখা হয় আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এটি ছিল অত্যন্ত সাহসী একটি সিদ্ধান্ত, যার মাধ্যমে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় নবযাত্রা সূচিত হয়। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু  লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। প্রস্তাবিত ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ। এ ছয় দফা মুক্তিকামী বাঙালি জাতির জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির বীজ বুনে দেয়, পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের গোড়ায় আঘাত করে। ১৮-২০ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মিটিংয়ে বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ছয় দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তখন তিনি সারা বাংলায় গণসংযোগ সফর শুরু করেন। এ সময় তাঁকে আটবার গ্রেফতার করা হয় এবং সর্বশেষ ৮ মে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এ সময় প্রায় তিন বছর বঙ্গবন্ধু কারান্তরিন ছিলেন। ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি আইয়ুব সরকার মোট ৩৫ জন বাঙালির (রাজনীতিবিদ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সরকারি অফিসার) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। জেলে বন্দী থাকা অবস্থাতেই ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ওপর পুনরায় গ্রেফতার আদেশ জারি করা হয়। ভারতের সহায়তায় পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে বঙ্গবন্ধুকে ১ নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবিতে দেশব্যাপী টানা গণআন্দোলনের মুখে আইয়ুব সরকার ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সব বন্দীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক বিশাল ছাত্র সমাবেশে লাখো শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করে। একই বছর ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আওয়ামী লীগের এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের নাম রাখেন বাংলাদেশ। এরপর ১৯৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে ৩১৩ আসনের বিপরীতে ১৬৭ আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ১৯৭০-এর নির্বাচন শুধু বাঙালি জাতির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্টই ছিল না, আওয়ামী লীগের জন্যও ছিল গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তর না করা এবং তার পরিণতিতে অসহযোগ আন্দোলন, ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধ শেষে দীর্ঘ শোষণ ও বঞ্চনার অবসানে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম, দূরদর্শী চেন্তা-চেতনা, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে গ্রহণযোগ্যতা ও আপসহীন নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ২৩ বছরের পাকিস্তানি জিঞ্জির থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করে কেবল একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্মই দিতে চাননি, আধুনিক, শোষণমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠারও স্বপ্ন দেখেছিলেন। যেটি ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা

স্বাধীনতা অর্জনের পর ৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে ১০ জানুয়ারি প্রিয় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন বাঙালির মুক্তিদূত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশে ফিরে সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে মনোযোগী হন জাতির পিতা। দেশ পুনর্গঠনে শুরুতেই জাতির পিতা যে য়টি বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন তার অন্যতম ছিল দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। কারণ জাতির পিতা এ দেশের জনগণের মুক্তির জন্য, অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। এরই অংশ হিসেবে ৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে স্বাধীনতার ১০ মাসের মধ্যেই প্রণয়ন করা হয় সংবিধান। এর মাধ্যমে তিনি চেয়েছিলেন দীর্ঘদিন ধরে শোষিত ও নিপীড়িত বাঙালি জাতিকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্তি দিতে, চেয়েছিলেন মানুষের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দিতে। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে অনেক অভ্যন্তরীণ দুর্বৃত্তায়ন এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে প্রায় গুছিয়ে আনেন তিনি। কিন্তু এর মধ্যেই বাংলার আকাশে নামে দুর্ভোগের ঘনঘটা। ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয় সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

স্বৈরশাসকরা যখন আওয়ামী লীগ ভেঙে দেওয়ার জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, ঠিক তখনই নেতা-কর্মীদের আহ্‌বানে দলের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে জীবনের মায়া উপেক্ষা করে দল ও দেশকে বাঁচাতে দেশে ফেরেন তিনি। স্বাধীনতাবিরোধীদের আগ্রাসনে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়া একরকম নিষিদ্ধই ছিল এ দেশে। নানা প্রতিবন্ধকতা প্রতিহত করে আবার রাজনীতিতে ফেরা সহজ ছিল না আওয়ামী লীগের জন্য। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের দল। জনগণের চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই আবার পুনর্জীবন হয় আওয়ামী লীগের। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দলের কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতির দায়িত্ব পান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দলীয় প্রধান হয়ে ১৯ মে দেশে ফেরেন তিনি। স্বৈরাচারী বাহিনী ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি সে সময় তাঁর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত টানা নয় বছর রাজপথে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা পরিবর্তন করে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চাপ সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ। ফলে ফিরে আসে সংসদীয় গণতন্ত্র। পরে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপির একটি সাজানো নির্বাচনের বিরুদ্ধে তিনি গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। এ আন্দোলনের মুখে ৩০ মার্চ তৎকালীন খালেদা জিয়ার সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয় এবং জুনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণতন্ত্রের মানসকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২১ বছর পর আবার আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে পথ হারানো বাংলাদেশ সঠিক পথে চলতে শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী হয়েই দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বণ্টনে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তি করে কয়েক দশক ধরে চলা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেন। ১৯৯৮ সালের বন্যায় আওয়ামী লীগ সরকার ২ কোটি বন্যার্ত মানুষের কাছে বিনামূল্যে খাদ্য সহযোগিতা পৌঁছে দিয়ে বিশ্বমানচিত্রে অনন্য নজির স্থাপন করেন। তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে একসময় অভিহিত বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির জন্য জীবনের প্রায় ১৪টি বছর কারান্তরালে ছিলেন। আর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা স্বাধীন দেশে বাঙালির অধিকার আদায় ও গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য অন্তত ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হন। ২০০৭ সালে সুশীলসমাজের ছদ্মবেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে দেশের বৃহত্তম দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরানোর অপচেষ্টা শুরু হয়। মিথ্যা মামলায় ২০০৭ সালে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে জেলে ঢোকানোর পর একের পর এক ১৩টি মামলা সাজানো হয় তাঁর নামে। পরে শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য গণজোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় জননেত্রীর জনপ্রিয়তা ও ব্যক্তিত্বের সামনে কুচক্রীদের সব ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। ২০০৮ সালের ১১ জুন জনগণের নেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় তারা। জেল থেকে বের হয়ে গণমানুষের ভাগ্য বদলের জন্য দিন বদলের সনদ’ ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে আয়োজিত জাতীয় নির্বাচনে একচেটিয়া জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট। জোটের মোট অর্জিত ২৬৭ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগই পায় ২৩০টি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ও রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করে ২০১৪ সালের নির্বাচনেও জয়লাভ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। অর্থনৈতিক, মানব উন্নয়ন, সামাজিক সব সূচকে আমরা পাকিস্তানকে অতিক্রম করেছি, অনেক সূচকে আমরা প্রতিবেশী ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছি। দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাওয়া নিয়ে এখন বিশ্বব্যাপী চলছে প্রশংসা। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে সরকার গঠন করার সুযোগ দিয়েছিল বলেই সমগ্র বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি অর্জনের পথে অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের বয়স এখন ৫০। এই ৫০ বছরে অনেক উত্থান-পতন ও নিদারুণ দুঃসময় পেছনে ফেলে এ পর্যন্ত সাড়ে ২৩ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে সরকার পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এ সাড়ে ২৩ বছরের মধ্যে ২০ বছরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর অদম্য নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই দেশ থেকে দূর হয়েছে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য। গত এক যুগে দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৫৪৩ ডলার, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা এক যুগে তা চার গুণ বৃদ্ধি হয়েছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার। মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ ৮৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকায়। এমনকি করোনা মহামারী মোকাবিলা করেও স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে দেশের অর্থনীতি। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয় ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০২১ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ২২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড ৪৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ক্ষমতা বৃদ্ধি, দেশের টেকসই অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে ওঠায় স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।

লেখক: সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, বর্তমানে মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।


আরও খবর



অন্তরঙ্গ অবস্থায় ধরা খেলেন প্রধান শিক্ষক, গাছের সঙ্গে বেঁধে গণধোলাই

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি

Image

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের তালুক ফলগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী বকুল (৫০) পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে মধ্যরাতে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৪ মে) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মিলন কুমার চ্যাটার্জি।

সোমবার রাতে এ-সংক্রান্ত ২৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এর আগে রোববার (১২ মে) রাতে উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের হুড়াভায়া খাঁ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গণধোলাইয়ের শিকার গোলাম রব্বানী বকুল ওই ইউনিয়নের আরাজি দহবন্দ গ্রামের নিয়ামতুল্লাহ সরকারের ছেলে ও দহবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম কবির মুকুলের বড় ভাই।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের হুড়াভায়া খাঁ গ্রামের মোস্তাফিজার রহমানের স্ত্রী আলেমা বেগমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক গোলাম রব্বানী বকুলের প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। প্রায় রাতেই তিনি ওই নারীর বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার গভীর রাতেও ওই নারীর সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করতে যান গোলাম রব্বানী বকুল। তাদেরকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে পেয়ে ওই নারীর ছেলে গোলাম রব্বানীকে আটক করে স্থানীয়দের খবর দেন। স্থানীয়রা এসে তাকে গণধোলাই দিয়ে বাড়ির পাশে একটি সুপারি গাছে রশি দিয়ে বেঁধে রাখেন।

পরে অভিযুক্ত শিক্ষক গোলাম রব্বানীর ছোট ভাই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কবির মুকুল ও সাবেক ইউপি সদস্য রেজাউল করিম ফুলবাবুসহ তার কয়েকজন আত্মীয় এসে তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী বকুল ও তার ছোট ভাই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কবির মুকুলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

তবে সাবেক ইউপি সদস্য রেজাউল করিম ফুলবাবু বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি স্থানীয়রা গোলাম রব্বানী বকুলকে সুপারি গাছে বেঁধে রেখেছেন। পরে তার ছোট ভাই গোলাম কবির মুকুল ও ভাতিজারা এসে নিয়ে যান।’

তিনি এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিলেন বলে এ ইউপি সদস্য জানান।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার (প্রাথমিক) মো. আশিকুর রহমান বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি আমার ক্লাস্টারের আওতাভুক্ত ফলগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তবে আমাদেরকে বিষয়টি এখনও কেউ জানায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দহবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল আলম সরকার রেজা বলেন, এক নারীর সঙ্গে অনৈতিক কাজ করার সময় গোলাম রব্বানী বকুলকে স্থানীয়রা গণধোলাই দিয়েছেন বিষয়টি শুনেছি।’

সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মো. মাহবুব আলম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনও কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’


আরও খবর



ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে, একদিনে ৩ প্রাণহানি

প্রকাশিত:বুধবার ১৫ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ১৫ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
স্বাস্থ্য ডেস্ক

Image

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১ ডেঙ্গুরোগী। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩২ জন।

বুধবার (১৫ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১ জন। এ নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন ১৬৪ ডেঙ্গুরোগী।

মঙ্গলবার (১৪ মে) সকাল ৮টা থেকে বুধবার (১৫ মে) সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ২১ জনের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার ১১ জন। এছাড়া ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০ জন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরিশালে, পাঁচজন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট দুই হাজার ৫৪৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার ৮৫১ জন। এ সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন দুই হাজার ৩৭৭ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যে জানা যায়, ২০২৩ সালে দেশের ইতিহাসে সব রেকর্ড এক হাজার ৭০৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২০২২ সালে ২৮১ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন, ২০২০ সালে সাতজন ও ২০১৯ সালে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়।


আরও খবর



কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ভালো আছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত:সোমবার ২০ মে ২০24 | হালনাগাদ:সোমবার ২০ মে ২০24 | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

কিরগিজস্তান থেকে এখনই শিক্ষার্থী ফিরিয়ে আনার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সোমবার (২০ মে) এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

ড. হাছান বলেন, নতুন করে কিরগিজস্তানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়নি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। কিছুক্ষণের মধ্যেই উজবেকিস্তানে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পৌঁছাবেন বিশকেকে। পরে তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করবেন।

এদিকে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হলেও আর কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এর আগে, রোববার (১৯ মে) ওভারসিজ করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের আলোচনা সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, কিরগিজস্তানে বাংলাদেশের কোনো মিশন নেই। উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সমদূরবর্তী দায়িত্বের অংশ হিসেবে কিরগিজস্তানের দেখভাল করেন। উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলামকে বাংলাদেশি ছাত্রদের নিরাপত্তায় কিরগিজস্তানে যেতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, কিরগিজস্তানে বিদেশি ছাত্র বিশেষ করে বাংলাদেশি ছাত্রদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু কেউ গুরুতরভাবে আহত হয়েছে বলে আমাদের কাছে কোনো তথ্য আসেনি। আমরা ইতোমধ্যে কিরগিজস্তানকে আমাদের গভীর উদ্বেগ জানিয়েছি। দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে; যেটিকে কিরগিজ ছাত্রদের সঙ্গে বিদেশি ছাত্রদের (পাকিস্তানি ও মিশরীয়) সংঘর্ষের ভিডিও বলে দাবি করা হয়। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর উত্তেজনা বেড়ে যায়, ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ।

এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুকে মর্মান্তিক ও দুঃখজনক উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শোক জানাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মিয়ানমার সীমান্তে দেশটির আভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে আবারো জড়ো হচ্ছে রোহিঙ্গারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আর কাউকে ঢুকতে দেয়া সম্ভব নয়।

এছাড়া অ্যাপোস্টাইল কনভেনশনে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে জানিয়ে ড. হাছান বলেন, এই কনভেনশনে যুক্ত হলে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের শিক্ষা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাইরে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস থেকে আর কাগজপত্র সত্যায়িত করা লাগবে না।


আরও খবর



ইসরাইলের সঙ্গে সকল বাণিজ্য বন্ধ করল তুরস্ক

প্রকাশিত:শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

অবৈধ দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছে তুরস্ক। তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ফিলিস্তিনি অঞ্চলে মানবিক ট্র্যাজেডি আরও খারাপ’ উল্লেখ করে এ ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি ইসরায়েল সরকার গাজায় নিরবচ্ছিন্ন এবং পর্যাপ্ত মানবিক সাহায্য প্রবাহের অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত তুরস্ক এই সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে বলে বলা হয়েছে।

তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের পণ্য আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, বৃহস্পতিবার থেকে তুরস্ক ইসরায়েল থেকে সব রপ্তানি এবং আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে।

২০২৩ সালেও দেশ দুইটির মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে এক্সে একটি পোস্ট করেছেন। এতে তিনি অভিযোগ করেছেন, বন্দর দিয়ে ইসরায়েলি পণ্য আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বাণিজ্যিক চুক্তি ভঙ্গ করছেন।

তুরস্ক বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়ায় বিকল্প হিসেবে অন্য দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানি এবং স্থানীয়ভাবে পণ্য উৎপাদনের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন দখলদার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।


আরও খবর



ভারত থেকে ট্রেনের ২০০ বগি কিনবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত:সোমবার ২০ মে ২০24 | হালনাগাদ:সোমবার ২০ মে ২০24 | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আরআইটিইএস লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্রডগেজ লাইনের জন্য ২০০ যাত্রীবাহী বগি কেনার চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী সবধরণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ২০ মাস পর থেকে বগি দেওয়া শুরু হবে এবং ৩৬ মাসে মধ্যে সব বগি হস্তান্তর করা হবে।

আজ সোমবার রাজধানীর রেলওয়ে ভবনে এই চুক্তি সই করা হয়।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম, রেলপথ সচিব হুমায়ুন কবীর, মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী, ভারতীয় কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহুল মিত্তাল, ভারতীয় রেলওয়ের প্রোডাকশন ইউনিটের অতিরিক্ত সদস্য সঞ্জয় কুমার পংকজ ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের হেড অফ করপোরেশন মিচেল ক্রেজা ও রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

পরে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেন, আমাদের ক্যারেজের খুব সমস্যা। এই মুহূর্তে তারা (ভারতীয়) যে ক্যারেজ দিচ্ছেন এর জন্য ধন্যবাদ। আগামী দুইমাসের মধ্যে যদি দুই সেট ক্যারেজ দেওয়া হয় তবে সেটা আমাদের জন্য ভালো হবে। বাকিগুলো শিডিউল করে নিলে হবে। রেলের কর্মকর্তারা স্লো। এটা আমার জন্য দুঃখজনক। তারা ভাবে এটা ৫ থেকে ৬ মাস লাগবে।

রেলসচিব হুমায়ুন কবীর বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ অংশে রেলের সংযোগ স্থাপন হয়েছে। এতে করে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণের জেলাগুলোর যোগাযোগ বাড়ছে। এর ফলে এসব প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ রেল যোগাযোগকে ত্বরান্বিত করবে।

মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, রেলের লক্ষ্য হচ্ছে যোগাযোগ পরিধি বাড়ানো, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রেল সংযোগ স্থাপন করা, যাত্রীসেবা দেওয়া। আর এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেটা অনেকাংশে সম্ভব হবে।

জানা যায়, সারা দেশে রেলের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়লেও যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে শেষের দিকে এগিয়ে চলেছে। রেলওয়ে আশা করছে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বাংলাদেশে রেলপথে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এ প্রকল্প দুটি পরিপূর্ণভাবে শেষ হলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে যাত্রী বহনের সুবিধা বাড়বে।


আরও খবর